নীলুর ছেড়ে যাওয়ার এবং নীলুকে ছেড়ে যাওয়ার গল্প

1.7K 45 7
                                    

এক
-এই দেখো তোমার জন্য ফুল নিয়ে এসেছি ।
আমার কথা শুনেও নীলুর মুখের কোন ভাব পরিবর্তন হল না । গম্ভীর মুখ গম্ভীরই রইলো ।
আমি আবার বললাম

-আরে দেখো ! বেলী ফুল । তোমার পছন্দের ফুল । জনো অফিস থেকে আসছিলাম তখন দেখি একটা পিচ্চি এই ফুল গুলো বিক্রি করছে । বেলী ফুল কেউ এই খোলা বিক্রি করে বল ?
নীলুর মুখের ভাব তবুও পরিবর্তন হল না । এই মেয়েটা হঠাৎ করে এমন গম্ভীর হয়ে উঠল কেন ?
একটা সময় ছিল বাসায় আসার সময় ওর জন্য কিছু না আনলে গাল ফুলিয়ে বসে থাকতো । পিচ্চি মেয়েরা বাবা মার কাছে কিছু আবদার করে না পেয়ে যেমন মুখ করে থাকে ঠিক তেমন ভাবে বসে থাকতো । তখন নীলুর চেহরার একটা আলাদা ভাব থাকতো । একটু অভিমান একটু দুষ্টামী ! আমার দেখতে মজাই লাহতো ।
তবুও আমি প্রতিদিনই কিছু না কিছু নিয়ে আসতাম ।

নীলু সব থেকে বেশি খুশী হত ফুল আনলে । আর বেলী ফুল আনলে তো কথাই নাই ।
কিন্তু এই এখনকার গাম্ভীর্যের কাছে সব কিছু কেমন যেন অন্য রকম লাগছে । কিছুতেই সেই পুরানো নীলুকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না ।
আমি নীলুর হাত ধরতে গেলাম । কিন্তু ও ধরতে দিল না ।
-কি হল এমন কেন করছো ?
হঠাৎই লীনুর চেহারায় কেমন একটা রাগের ভাব দেখতে পেলাম । বেশ কর্কশ গলায় বলল
-জানো না আমি এমন কেন করছি ?
আমি চুপ করে যাই । আসলে আমি জানি নীলুর রাগের কারনটা কি ?
আমি আর কিছু বললাম না । সত্যি বলতে কি আমি আর কিছু বলতে পারলাম না ।
অফিসের কাপড় ছাড়ার জন্য শোবার ঘরের দিকে যাবো ঠিক এমন সময় নীলু পেছন থেকে বলে উঠল
-আমি আর তোমার সাথে থাকবো না !
গত কালকেই নীলু কথাটা বলেছিল ! রাতের খাবার সময় ! আমি প্রথমে ভেবেছিলাম একটু রাগ থেকে কথাটা বলছে কিন্ত ওর মুখ দেখে মনে হল ও বেশ সিরিয়াস !
গত কালকে অনেক বুঝিয়েছি । বলেছিলাম এই রকম হুট হাট করে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক না । আর বিয়ে টা তো কোন প্রাইড থেকে কেনা শাড়ি না যে ইচ্ছে হল আর বদলে ফেললাম । ঘুমনোর সময় ভেবেছিলাম হয়তো আর বলবে না এই কথাটা কিন্তু নীলুর মন থেকে কথাটা যাই নাই ।
আমি বললাম
-দেখো কাল রাতেই আমরা এই নিয়ে কথা বলেছি । আর কয়টা দিন অপেক্ষা করি আমরা । এখনই তো .....।
নীলু খুব শান্ত কন্ঠে বলল
-আমি তোমার ঘর করবো না ! যতদিনই হোক তোমার দ্বারা ....।
নীলু কথাটা শেষ করলো না !
আমি বললাম
-চুপ করলে কেন ? শেষ কর লাইন টা ?
নীলু আমার কথার জবাব না দিয়ে বলল
-আমি ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছি । ভালই ভালই যদি আমাকে ডিভোর্স দেও তাহলে তো কোন সমস্যা নাই কিন্তু যদি আমাকে কোর্টে যেতে হয় তাহলে কিন্তু আমার মুখ বন্ধ থাকবে না । তোমার অক্ষমতার কথা আমি সবাইকে জানিয়ে দেব ।
-নীলু ! প্লিজ ! এতো তাড়াহুড়া কর না । একটু .......
নীলু আমার কথায় বিরক্ত হচ্ছিল বুঝতে পারছিলাম । বলল
-দেখ সুমন ! আমি কোন ইমপোটেন্টের ঘর করবো না । আমি মা হতে চাই ! বুঝছো তুমি ? মা ডাক শুনতে চাই কিন্তু তুমি আমাকে সেই জিনিস দিতে পারবে না । ঠিক আছে ?
আমি নীলুর কথাটা শুনে একেবারে চুপসে গেলাম । এতো বড় একটা কথা নীলু কিভাবে বলল ?
প্রায় দুই বছর ধরে ওর সাথে আছি । আর কদিন পরেই আমার দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকী । এবার ভেবেছিলাম ওকে নিয়ে কাঠমান্ডু যাবো । সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম কিন্তু মাঝ খান দিয়ে এই ঝামেলা ।

ভালবাসার অনু-গল্প সমগ্রWhere stories live. Discover now